জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে কি সুন্দরবন এলাকায় মাছের প্রাপ্যতা কমবে?

|

This page in:

  
মাতৃমৃত্যু বা শিশু মৃত্যু কমানোর মতো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বহু অর্জন থাকা সত্ত্বেও  দেশের অসংখ্য মানুষ অপুষ্টির শিকার। দেশের প্রায় ৩৩-৩৬ শতাংশ শিশু এবং ১৯ শতাংশ মহিলা অপুষ্টিতে ভুগছে।  অপুষ্টির হার স্বভাবতই দরিদ্র এবং নিম্নবিত্ত  পরিবারগুলোতে বেশি ।  ওয়ার্ল্ড ফিশ এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে অপুষ্টির সমাধান  রয়েছে বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য "মাছে  ভাতে"। নানা ধরণের ছোট মাছ শরীরে ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ডি, এ, বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, জিঙ্ক, আয়রন এর ঘাটতি মেটায়। তাই অপুষ্টি এড়াতে নিম্নবিত্ত পরিবারের খাবারের তালিকায় নানা  রকমের টাটকা মাছ - বিশেষত ছোট মাছের পরিমান বাড়াতে হবে। 

পরিবেশ উষ্ণায়নের সাথে সাথে কিন্তু মাছের যোগান পাল্টাবে । 
পরিবেশ উষ্ণায়নের সাথে সাথে পৃথিবীতে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে - জানিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আন্তর্জাতিক প্যানেল (আই,পি, সি, সি). গত কয়েক দশক ধরেই প্রতি বছর অগ্রহায়ণ থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলবর্তী  এলাকায়  নদী  নালায় নোনা পানির সমস্যা দেখা যাচ্ছে।  বিশ্বব্যাংক এবং ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং বাংলাদেশে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে (River Salinity and Climate Change: Evidence from Coastal Bangladesh) জানিয়েছে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ইছামতি, বলেশ্বর, শিবসা, পশুর, আধারমানিক সহ বিভিন্ন নদী এবং সংলগ্ন খাল বিলে  নোনা  পানির সমস্যা শুকনো মৌসুমে আরো বাড়বে| ফলে, দক্ষিণ  পশ্চিম উপকূলবর্তী   অনেক উপজেলায় মিঠা  পানির মাছের প্রাকৃতিক আবাস কমে যাবে।  স্বভাবতই এর ফলে  মিঠা পানির মাছের যোগান কমবে।


দেশের দক্ষিণ পশ্চিমে, বিশেষত: সুন্দরবনের কাছাকাছি অনেক উপজেলাতেই দারিদ্রের হার বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি। নোনা পানির সমস্যা দরিদ্র পরিবারগুলোকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তা খতিয়ে দেখেছে বিশ্বব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদন (Impact of Climate Change and Aquatic Salinization on Fish Habitats and Poor Communities in Southwest Coastal Bangladesh and Bangladesh Sundarbans)
সুন্দরবন অঞ্চলে আজকাল পাবদা , বাচা, পুঁটি, শিং, মেনি, টাকি, কালিকৈ মাছ প্রায় দেখাই যায় না|  গবেষণা প্রতিবেদনটি জানিয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকায় - ফকিরহাট, রামপাল , বাগের হাট, মোড়লগঞ্জ, কয়রা, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, বরগুনা, বামনা, ভান্ডারিয়া, জিয়া নগর এবং আমতলী উপজেলায় মিঠা পানির মাছের আবাস অর্ধেকের মতো  (৪৯ শতাংশ পর্যন্ত) কমবে। এই বারোটি উপজেলায় ৮ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস করে দারিদ্র সীমার নিচে।  স্বভাবতই তাদের খাবারের তালিকায় আহরিত (নদী বা খালের )মাছের পরিমান কমবে। 

টেবিল: উপজেলায় মিঠা পানির মাছের আবাস কমার আশংকা



প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য - ৯০ এর দশক থেকে বাজারে চাষের মাছের যোগান বাড়ছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষণা জানিয়েছে সুষম খাদ্য গুনে চাষের মাছ এখনো আহরিত মাছের সমান নয়। (সূত্র: Higher fish but lower micronutrient intakes: Temporal changes in fish consumption from capture fisheries and aquaculture in Bangladesh)
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন বাংলাদেশে সামাজিক অর্থনৈতিক প্রসঙ্গে মাছ খাওয়া ও শিশুস্বাস্থ্য (The Socioeconomics of Fish Consumption and Child Health in Bangladesh) দেখা গেছে বর্ষাকালে ও বর্ষার ঠিক পরে মাছ যখন সুলভ, তখন নিতান্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের খাবারের তালিকাতে মাছের পরিমান একটু হলেও বাড়ে।  পরিসংখ্যান অনুসারে, সুন্দরবন প্রভাবিত এলাকায় দরিদ্র পরিবারে মাছ খাওয়ার সম্ভাবনা জ্যৈষ্ঠ মাসে ২৭ শতাংশ থেকে ভাদ্র মাসে বেড়ে হয়  ৫৬ শতাংশ।  কাজেই অপুষ্টি প্রতিরোধে মাছের ভূমিকা কার্যকরী করতে হলে বিভিন্ন আহরিত পুষ্টিদায়ক মাছ সহজ প্রাপ্য করতে হবে সাশ্রয়ী মূল্যে - বিশেষত শুকনা মৌসুমে।
 
সুস্মিতা দাশ গুপ্ত, গোলাম মুস্তফা

Authors

Susmita Dasgupta

Lead Environmental Economist, Development Research Goup, World Bank

Md.Rafiqul Islam Harun
মে 23, 2019